তুমি হাতখানি রাখো  

প্রকাশ করেছেন নকীব -শিরোনাম: , ,

হাইনরিখ হাইনের সাথে আমার পরিচয় ১৯৯৭-এ…যখন আমি ক্লাস সেভেনের ছাত্র। পরিচয় হয়েছিলো খুব সাদামাটাভাবে-দৈনিক ইত্তেফাকের সাময়িকীতে তার জন্মের দুইশ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রকাশতি একটি প্রবন্ধ পড়ে। এরপর হুমায়ূন আজাদ কর্তৃক হাইনের কিছু কবিতার বাংলা অনুবাদ পড়ার সৌভাগ্য আমার হয়। এবং সেই অনুবাদ আমার মনে গভীরভাবে দাগ কাটে। কবিতার পেপার কাটিং জমানো তখন আমার একটা হবি ছিল। এবং কবিতাগুলো এখনো আমার সংগ্রহে আছে। পরবর্তীতে আহমদ ছফার জার্মান সাহিত্যের কবিদের উপর লেখা (বইটির নাম মনে নেই) একটি বৃহদাকার বই-এ হাইনে সম্পর্কে আরো ভালোভাবে জানার সুযোগ হয়। নেট নেয়ার পড়ে হাইনের কবিতার ইংরেজী অনুবাদ পড়ার সুযোগ পেয়েছি। সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখায় বার বার হাইনের নাম উঠে এসেছে।

হাইনে (১৭৯৭-১৮৫৬) জার্মান ভাষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি। বিষাদময় রোমান্টিক কবি বলেই তাঁর সুখ্যাতি বেশি। কবিতার ভাষা রচনায় তিনি অত্যন্ত সরল। তাঁর লেখায় ইশ্বর প্রেম ও মানবপ্রেম উঠে এসেছে স্বমহিমায় কিন্তু অত্যন্ত সহজভাবে। কিছুটা রবীন্দ্রনাথের আদ্ধাত্বিক ও পূজা বিষয়ক গানের মতো। ধর্মে ইহুদী ছিলেন বলে আজীবন তাকে খ্রিষ্টান মৌলবাদীদের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছেন। সমাজে সংখ্যালঘু হিসেবে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা হতে বঞ্চিত হয়েছেন। জীবনের শেষ আট বছর যক্ষায় আক্রান্ত হয়ে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে গেছেন। যক্ষার কথা জানতে পেরে বাড়িওয়ালা তাঁকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। প্যারিসে মৃত্যুর পূর্বমূহুর্তে তাঁর মন্তব্য ছিলো..” ইশ্বর আমাকে ক্ষমা করবেন, কারন এটাই তার কাজ।”

আমার এই প্রিয় কবির কবিতার অনুবাদের সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেয়ার লোভ সামলাতে পারলাম না। যদি বাংলা ভাষায় হাইনের অনুবাদের কাব্যগ্রন্থ আছে কিনা আমার জানা নেই। আমি প্রতি বই মেলায় খুঁজি। আমার সেই পুরানা পেপার কাটিং হতে শ্রদ্ধেয় হুমায়ুন আজাদের একটি অনুবাদ এখানে তুলে দিলাম।

তুমি হাতখানি রাখো
প্রিয়তমা, তুমি হাতখানি রাখো এই বুকে।
শুনতে পাচ্ছো কি শব্দ? কে যেন হাতুড়ি ঠুকে চলেছে?
সেখানে এক মিস্ত্রি থাকে, যে বানিয়ে চলেছে এক শবাধার।
কার জন্য জানো?- আমার আমার।

উল্লাসে বিদ্বেষে নিরন্তর সে হাতুড়ি ঠুকছে দুই হাতে,
কিছুতেই ঘুমোতে পারছি না আমি, দিনে আর রাতে।
মিস্ত্রি, দ্রুত করো, তুমি কাজ শেষ করো তাড়াতাড়ি,
যাতে আমি অবশেষে বিগ্নহীন ঘুম যেতে পারি।

অনুবাদ: হুমায়ুন আজাদ

This entry was posted on ডিসেম্বর ১৮, ২০০৮ at ১২:২৯ AM and is filed under , , . You can follow any responses to this entry through the comments feed .

2 মন্তব্য(গুলি)

টেষ্ট কমেন্ট

১৮ ডিসেম্বর, ২০০৮ এ ৯:৫০ AM
নামহীন  

হাইনের কিছু কবিতা সুধেন্দ্রনাথ দত্ত অনুবাদ করেছিলেন। পড়ে দেখতে পারেন ।

২ জানুয়ারী, ২০১২ এ ১০:০১ AM

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন