লজ্জাবতী প্রিয়তমাকে  

প্রকাশ করেছেন নকীব -শিরোনাম: ,

ভূমিকা ও অনুবাদ: সুরেশ রণ্জ্ঞন বসাক
সপ্তদশ শতকের লিখিত পাঁচটি শ্রেষ্ঠ কবিতা বেছে নিতে হয় তবে অবধারিতভাবেই এন্ডু মার্ভেলের টু হিজ কয় মিসট্রেস কে অন্তর্ভুক্ত করতে হয়। টু হিজ কয় মিসট্রেস মূখ্যত প্রনয়ের কবিতা। এর জৈবগন্ধটুকু বাদ দিলে অনায়াসে আমাদের রবীন্দ্রনাথের কবিতার স্বগোত্রীয় ভাবা যায়। তিনশোরও বেশি বছর ধরে এ কবিতা অব্যাহত গঠন-পাঠনে প্রাচীন হয় নি। পুরোনো হয নি এর বাণী ও প্রকাশের ঐশ্বর্য।

লজ্জাবতী প্রিয়তমাকে

আমাদের থাকতো যদি অনিঃশেষ পরিসর ও অনন্ত সময়
তোমার এ লজ্জা, প্রিয়া, হতো না কিছুতেই দোষের বিষয়।
দু'জনে বসে বসে ভেবে ভেবে করতাম ঠিক
কিভাবে কাটাবো দীর্ঘ দিবস আর যাবো কোন্ দিক।
সুদূর ভারতে তুমি গঙ্গার তীরে তীরে হেঁটে
মুক্তো কুড়োতে যদি, হামবুরের থৈ থৈ তটে
আমি একা হতভাগ্য হাপিত্যেশে কাটাতাম দিন।
তবু বলি, তোমার জন্য আমার প্রেম অমলিন।
নুহের বন্যার আগে বছর দশেকেরও যদি হয়
তোমাকে বাসিবো ভালো, জেনো নিশ্চয়;
যদি চাও অস্বীকার করে যেও যতদিন খুশী
যদ্দিন ইহুদীরা ভিন্ন ধর্মে না হচ্ছে বিশ্বাসী।
আমার সবুজ প্রেম, সাম্রাজ্য কোন ছার, ঢের বৃহত্তর
এ প্রেম ক্রমশঃ বাড়ে, গাঢ় হয়, হোক না মন্থর।
কপালের রুপ দেখে, বন্দনা করে তোমার দু'চোখ ডাগর
জেনো বন্ধু, নির্ঘাৎ কাটাতে পারি একশো বছর।
আরো শ'দুয়েক বছর না হয় কাটিয়ে দিলাম স্তন বন্দনায়;
তিরিশ হাজার বছর অবশিষ্ট দেহ বর্ণানায়।
প্রতিটি অঙ্গের স্তবে বরাদ্দ করেছি প্রিয়া এক যুগ সময়
শেষ যুগে এসে যদি উন্মুক্ত করো তোমার পাষাণ হৃদয়।
এ সম্মান তোমারই প্রাপ্য- সব স্তব প্রশংসাকীর্ত্তন
তোমাকে যে ভালোবাসে তার কি হওয়া সাজে স্তুতিতে কৃপন।

কিন্তু প্রিয়ে, আমার পশ্চাতে যে নিত্যদিন শুনি
কালের ডানাওয়ালা রথচক্রের ধাবমান ধ্বনি।
যতোদূর চোখ যায় চেয়ে দেখো নিস্তব্ধ নিথর
শুয়ে আছে মহাকাল ঠিক যেন বালুকাপ্রান্তর।
তোমার এ রূপ প্রিয়ে থাকিবে না জেনো চিরকাল
মর্মর সমাধিতলে যখন ঘুমাবে তুমি, রূপের কাঙাল।
আমার প্রেমের গান পৌছাবে না তোমার কবর
সযত্নে রক্ষিত সব সতীপনা খেয়ে নেবে পোকা ও মাকড়।
তোমার মেকি আব্রু ,হায় নারী, ধুলো হবে সার
আমার কাম ও প্রেম জ্বলে পুড়ে হবে অঙ্গার।
কবর বড়োই স্নিগ্ধ, নিঃসন্দেহে বড়ো নিড়িবিলি,
তাই বলে কোন্ প্রিয় সেখানে প্রিয়াকে তার, করে কোলাকুলি?

অতএব যখন রয়েছে দেহে ঢলো ঢলো যৌবনমদির
সোনালী রুপালী রঙ ত্বক ছোঁয় ভোরের শিশির,
যখন তোমার প্রাণ কোষের প্রতিটি রন্ধ্রে ধরে
জাগ্রত কামনায় প্রতি মুহূর্তকে তোলে ভরে
এই তো মাহেন্দ্রসময়, দু'জনেই ভালোবাসা গড়ি
বিশ্ব জানিয়া রাখুক, প্রেমবিদ্ধ আমরা দুই শুক ও সারী।
সময় খাবে তো খাক্, দুঃখ নেই, সেই ঢের ভালো
তিলে তিলে অগস্ত্য যাত্রার কোন মানে আছে বলো?
চলো তবে আমাদের যা কিছু আছে সুন্দর শার্দুল
মিলেমিশে একাকার ব্রক্ষ্মান্ডে গড়িয়ে যাবো গোলক বর্তুল
লৌহ দড়জা খুলে জীবনের পথচলা করিয়াছি স্হির
কঠিন আঘাত হেনে চূর্ণবিচূর্ণ করবো আনন্দ শরীর,
কারো সাধ্যি নেই সূর্যকে থামিয়ে দেই দূরের আকাশে
নিশ্চয় ঘোরাতে পারি আমাদের গ্রহ পথে, সেটা কম কিসে।

This entry was posted on ডিসেম্বর ১৮, ২০০৮ at ১১:০৮ PM and is filed under , . You can follow any responses to this entry through the comments feed .

0 মন্তব্য(গুলি)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন